বিশেষ প্রতিনিধি ফুলেল শুভেচ্ছা, কেক কাটা, অভিবাদন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা এবং গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ৮৭তম জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়েছে। এ সময় শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত জন্মদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, শুভানুধ্যায়ী ও গণফোরামের নেতা-কর্মীরা।
আগত অতিথিদের উদ্দেশে আবেগে আপ্লুত ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দেশ এবং জাতি পড়েছে সেখান থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আমরা এখানে পাচ্ছি। আমার আন্তরিক আবেদন, আসেন আজকেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ইতিহাস থেকে যেমন শিক্ষা আমরা পাচ্ছি, যখনই আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছি তখন যত কঠিন চ্যালেঞ্জই হোক আমরা সেটা অতিক্রম করতে পেরেছি। আসেন আমরা আজকে এই সিদ্ধান্ত নেই, আমরা সকলে মিলে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেই।’
রোববার ছিল ড. কামাল হোসেনের ৮৭তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে ‘ড. কামাল হোসেনের বর্ণাঢ্য জন্মদিন উৎসব’ এর আয়োজন করে গণফোরাম। উৎসবের শুরুতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ…’ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয় ড. কামাল হোসেনকে। গান পরিবেশ করেন অ্যাডভোকেট সুরাইয়া নাজনীন। এরপর উত্তরীয় পরিয়ে দেন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন। পরে একে একে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সামাজিক সংগঠক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় ড. কামাল হোসেনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা করেন বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য আব্দুল লতিফ মাসুম, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ এখন অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন অন্ধকারের মধ্যে আছি। এই গভীর অন্ধকার রাত প্রায় শেষের দিকে। রাত যত গভীর হয় সকাল তত কাছে আসে। আগামী দিনে একটি নিকটবর্তী সময়ে আসতে পারে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডা. কামাল হোসেন এখন পর্যন্ত সবার কাছে প্রাসঙ্গিক। তাঁর দিকে আঙুল তুলতে পারে এমন কেউ এই দেশে নেই। কেউ বলতে পারবে না তিনি দুর্নীতি করেছেন, সন্ত্রাসী কাজ করেছেন। আমি চাই তিনি আরও অনেক সময় বাঁচুক। তিনি আরও বলেন, ড. কামাল হোসেন শুধু গণফোরামের সভাপতি নন, তিনি সারা দেশের মানুষের সভাপতি। সারা দেশের সবাইকে একত্র করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে যে ইমেজ প্রয়োজন সে ইমেজ কামাল হোসেনের আছে।শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ড. কামাল হোসেন আমাদের দেশের বাতিঘর হয়ে সারা জীবন সমুজ্জ্বল থাকবেন এবং আমাদের দিশা দেখাবেন।
আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, আজকে যে অবস্থায় ড. কামাল হোসেন দেশকে দেখে যাচ্ছেন, গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটানো, পুণঃপ্রতিষ্ঠা করা তাঁর প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের শ্রেষ্ঠ পথ। সাইফুল হক বলেন, ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পরবর্তী তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফেরা ও আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনেও তাঁর অবদান রয়েছে। আওয়ামী লীগ ড. কামাল হোসেনকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধারণ করতে পারেনি।জোনায়েদ সাকি বলেন, ছাত্র রাজনীতির সময় তাঁকে শাসক দলের রাজনীতিবিদ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। তিনি শাসক শ্রেণির মধ্যে থাকলেও জনগণের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যক্তি। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থেকেছেন। তাঁর কর্ম বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে।
আবু সাঈদ খান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের বিরাট অংশজুড়ে ড. কামাল হোসেনের নাম রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে তিনি স্বাধীনতাত্তর বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন। সংবিধান প্রণয়নেও তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম আইনমন্ত্রী ছিলেন। পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের খুনি মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেও তিনি তাতে যুক্ত হননি। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রশ্নে তিনি সবসময়ই আপোষহীন ছিলেন। তিনি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমরা তাঁর শতায়ু কামনা করি।বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাগরিক কণ্ঠের প্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন সব সময় মানুষের পাশে থেকেছেন, সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।